সন্দীপ দাশগুপ্ত
Auteur van পুজোসংখ্যার অলংকরণ
Over de Auteur
Fotografie: https://www.facebook.com/sandip.dasgupta.520/
Werken van সন্দীপ দাশগুপ্ত
পুজোসংখ্যার অলংকরণ 1 exemplaar
Tagged
Onze site gebruikt cookies om diensten te leveren, prestaties te verbeteren, voor analyse en (indien je niet ingelogd bent) voor advertenties. Door LibraryThing te gebruiken erken je dat je onze Servicevoorwaarden en Privacybeleid gelezen en begrepen hebt. Je gebruik van de site en diensten is onderhevig aan dit beleid en deze voorwaarden.
সন্দীপ দাশগুপ্ত
প্রতিক্ষণ
মূল্য ২০০.০০
খুব মন খারাপ ভালো করার এক ওষুধ আমি আবিষ্কার করেছিলাম শিলিগুড়ি থাকাকালীন। তখন খবরের কাগজের কাজে একা থাকি অফিস মেসে। সেই সময় পরপর কয়েকটি ঘটনা-দুর্ঘটনা ঘটে যায় আমার কলকাতার জীবনে। কিন্তু সেখানে আমি অনুপস্থিত, ফলে কিছু করার নেই, ফেরার উপায় নেই। সেই সময় আমার কাজ শুরু হত, অন্যান্য কাগজের মতই বিকেলের দিকে, ফলে সারা সকাল-দুপুর এক অসহ্য সময় কাটাতে হয়েছে।
আগেও গেছি, তা একদিন বেরিয়ে আশুতোষ মুখার্জি রোডে আনন্দ পাবলিশার্সের দোকানে চলে গেলাম। ঘন্টা তিনেক কাটিয়ে দেখলাম, ওই সময়টুকু আমার কোন মন খারাপের কথা মনে হয়নি। এর পর কয়েকদিন একইভাবে আনন্দের দোকানে চলে গেছি, পরিচয় ভালোই হয়ে গিয়েছিল। কোনদিন ভদ্রলোক (লজ্জার মাথা খেয়ে বলছি, নাম ভুলে গেছি) কোনদিন তার স্ত্রী দোকানে থাকতেন। দোকান বন্ধ থাকলেও ফোন করে গেলে নিজে এসে খুলে দিতেন। তার মানে এই নয় যে আমি প্রতিদিন বই কিনতাম, আসলে আমার বইয়ের সান্নিধ্য ভালো লাগত, আমি ভুলে থাকতে পারতাম আমার দুঃখের কথা। যে দিন বাধ্য হয়ে শিলিগুড়ি ছেড়ে চলে আসি, সেইদিন অনেকগুলি বই কিনে, কিছু বাকি টাকা ফেরত দিয়ে কলকাতা ফিরেছিলাম।
এই সেদিন হঠাৎ এক মৃত্যুর খবরে আমার মন তীব্র বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয়েছিল। প্রথমে কথাটা রেজিস্টারই করেনি। যখন করল তখন একই সঙ্গে মন ও শরীর দুটোই বেশ বিদ্রোহ করে উঠল। তারপর ডাক্তার-বদ্যি, ওষুধপথ্য। দুদিন শয্যাশায়ী। তারপর সেই পুরনো ওষুধ ব্যবহার করলাম। নেমে পড়লাম কলেজ স্ট্রিটে। প্রতিক্ষণ এর দোকানে আসা হয়নি কোনদিন। গিয়ে ঢুকে পড়লাম। সুন্দর সাজানো গোছানো বইয়ের দোকান, কয়েকজন ক্রেতাও আছেন। নানান প্রকাশনের একটু হটকে বইয়ের খনি দোকানটা। আছে বাংলাদেশের বই। প্রচুর আর্টপ্রিন্ট, যোগেন চৌধুরীর নোট বুকের ফ্যাক্সিমিলি। ছোটখাট হ্যান্ড ক্রাফটেড নোটবই ও অন্যান্য। এক কাপ সুন্দর চা এর মধ্যেই পরিবেশন হয়ে গেছে।
এর মধ্যেই আমি জেনেছি, সন্দীপ দাশগুপ্তের বই বেরিয়েছে। বইয়ের বিষয়বস্তু অলংকরণ। এর মধ্যেই রোচিষ্ণু তার পোস্টে “মজা করিয়া পড়িতে পড়িতে ঘরে যাও” বলে যে ভাবে হাক পেড়ে পোস্ট দিয়েছে তাতে তো ভেবেছি যে বই আর পাওয়া হল না। তা গিয়ে দেখি বই আছে, আগেই একটা বগলদাবা করে অন্যান্য বই দেখে বাড়ি ফিরলাম।
দোকানে গিয়ে তো বইটা এক ঝলক দেখেছি, কিন্তু বাড়ি এসে জলখাবার আর চা খেতে খেতে বইটা অর্ধেক শেষ। তারপর রাত্রির খাবারের আগেই পুরো শেষ। তাঁর বাবা সুবোধ দাশগুপ্ত কে নিয়ে নানান পোস্ট পড়েছি, শিশির মঞ্চে বন্ধু শান্তনু সাহার পরিচালনায় দেখা হয়ে গেছে ‘কলমিলতা ও কাঁচডানার গল্প’। বাবাকে নিয়ে হাওড়া ও একাডেমিতে দুটো প্রদর্শনীও করেছেন তিনি। দুটোই দেখেছি গিয়ে।
সন্দীপ বাবুর কিছু লেখা আগে ফেসবুকে পড়েছি। তার ভাষা সচল, টিবি স্যানিটোরিয়াম নিয়ে এক লেখা পড়ে আমার রেমার্কের একটা লেখার কথা মনে হয়েছিল। যাই হোক, বইয়ের কথায় আসি, লেখা শুরু হয়েছে এইভাবে, “পুজোসংখ্যার অনুরাগী হওয়ার জন্য খুব যে দেবদ্বিজে ভক্তি থাকার দরকার পড়ে এমন তো নয়। বাঙালি হওয়ার দরকার পড়ে। ……”
আকাশে ওই চাঁপা রঙের রোদ আর পেঁজা তুলো মেঘ দেখলে, আজও মন উন্মনা হয়ে যায়। আর আমাদের ছোটবেলায় যে সমস্ত পুজাবার্ষিকী আমরা গোগ্রাসে গিলেছি তার অলংকরণ নিয়ে আলোচনা এবং সেগুলি দেখতে দেখতে বয়স কখন যেন কমে যাচ্ছিল। এখনও মনে পরে ১৯৭৮ সালে ক্লাস ওয়ান এ পড়ার সময় বাবা বাড়িতে নিয়মিত আনন্দমেলা আনার ব্যবস্থা করেছিলেন, তখন পরেশ দাদু বাড়িতে এসে বই দিয়ে যেতেন। সঙ্গে ইন্দ্রজাল কমিকস। পড়ার অভ্যেস কম ছিল, কিন্তু ছবি দেখার অভ্যেস তৈরি হয়ে গিয়েছিল। পরে যখন বন্ধুদের মধ্যে বই আদান প্রদান আরম্ভ হয়ে কিশোরমন, শুকতারা এগুলো হাতে হাতে ঘোরাফেরা শুরু করে এবং বইয়ে উল্লিখিত সেই খেলার মতই আমাদের মধ্যে চালু হয়ে গিয়েছিল অলংকরণ দেখে শিল্পীর নাম বলা। সুধীর মৈত্র, বিমল দাস, নারায়ণ দেবনাথ, সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়, অনুপ রায়, সমীর সরকার, দেবাশীস দেব তখন আমাদের ঘরের শিল্পী হয়ে গেছেন।
কিন্তু যে শিল্পীদের নামের পরিচয় আগে দেওয়া হত না, যারা অলংকরণ করতেন তাদের অবস্থা কী ছিল সেই বিষয়ে এক ধারণা এই বইতে পাওয়া যাবে। সুবোধ দাশগুপ্তের কথায়, ‘ও পুজো এসে গেছে!’ শুনে নায়ক সিনেমার মুকুন্দ লাহিড়ীর কথা মনে পড়ে। কিন্তু মুকুন্দ লাহিড়ী যখন সামিটে ছিলেন সেই অর্থ ভাগ্য কী এদের ছিল? উত্তর না। পুজোর গল্প আর ছবি আঁকার প্রক্রিয়া নিয়ে সুব্রত চৌধুরী আর কৃষ্ণেন্দু চাকীর অভিজ্ঞতাও এক প্রাপ্তি। অসম্ভব সুন্দর এই বইতে প্রচুর শিল্পীর কথা আর তাদের আঁকা প্রচুর ছবির কথা জানা যায়। কথার প্রসঙ্গেই ছবি এসেছে প্রচুর। আমাদের জন্মের আগের প্রচুর শারদীয়ার ছবি দেখার সুযোগ করে দিয়েছে এই বই। শুধু সেগুলি দেখার জন্যও এই বই কেনা যায়। কোন গুরুগম্ভীর আলোচনা নয়, একটা মন ছুঁয়ে যাওয়া তিরতির স্রোতের মত এক স্মৃতিকাতরতাও এই বইয়ের আরেক সম্পদ।… (meer)