Afbeelding auteur
3 Werken 3 Leden 2 Besprekingen

Werken van Banaful

Tagged

Algemene kennis

Er zijn nog geen Algemene Kennis-gegevens over deze auteur. Je kunt helpen.

Leden

Besprekingen

'পশ্চাৎপট' বনফুল খ্যাত বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় এর জীবনচরিত। জীবন সায়াহ্নে প্রায় ৭৮ বছর বয়সে এসে লেখা বই। ১৯৭৮ সালের জুলাই মাসে বইটি প্রকাশিত হবার সাত মাস পরই মৃত্যুবরণ করেন বনফুল। বাংলা ব্যঙ্গসাহিত্য আবুল মনসুর আহমেদ, পরশুরাম, বনফুল, আহমদ ছফা প্রমুখ অসম্ভব গুণী সব মানুষের লেখনীতে সমৃদ্ধ। এঁরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ মহিমায় ভাস্বর, প্রত্যেকেরই ব্যঙ্গের আলাদা ঘরানা। এঁদের মাঝে বনফুল এর একটি বিশেষত্ব হল তাঁর ব্যঙ্গে দৈনন্দিন জীবনে আচরিত মানুষের স্বার্থপরতা, লোভ, পরশ্রীকাতরতা (ক্ষেত্র বিশেষে পরস্ত্রীকাতরতাও বটে!) ইত্যাদি অন্ধকার দিকগুলো খোলাখুলি ভাবে এসেছে। বনফুলের গল্পের চরিত্রগুলো অদ্ভুত। হাস্যকর রকম অবিশ্বাস্য তাদের কাণ্ডকীর্তি। কিন্তু চারপাশের সমাজে তাকালে আসলে এই চিত্রই দেখা যায়। মানুষ আসলেই এমনই অবিশ্বাস্য এক প্রাণী! এটা বোঝার জন্য বনফুলের বই আর এখন দেখতে হয়না, পত্রিকার পাতা উল্টালেই বোধহয় চলে। বনফুলের অনেক গল্পই আছে পড়লে মনে হয়, মানব চরিত্রের ওপর রীতিমত বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। জীবনের একেবারে শেষ প্রান্তে এসে এই জীবনচরিত যখন লিখেছেন, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে তাঁর এই বীতশ্রদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গি আরো স্পষ্ট ও শাণিত মনে হয়েছে। ব্যঙ্গশিল্পী ব্যঙ্গ করেন প্রচণ্ড কষ্টের ভিত্তিতে। এই বইয়ের অনেক জায়গাতেই তাঁর কষ্টের সেই দীর্ঘশ্বাস স্পষ্ট শোনা গেছে।

'পশ্চাৎপট' বনফুল শুরু করেছেন তাঁর জন্মবৃত্তান্ত দিয়ে। বিশ শতকের শুরুর দিকে, ১৮৯৯ সালে জন্ম তাঁর। স্থবির এক ভারতবর্ষের গল্প সেই সময়টা। সহজ সরল হিসেব নিকেশ আর চাল চলনের সময় তখন। গ্রাম্য এক ডাক্তারের ছেলে বলাই কিভাবে বেড়ে উঠছে, টুকটাক লেখালেখি করছে, ভবিষ্যতের বনফুল হবার পথে একটু একটু এগোচ্ছে, এই গল্পগুলোই এসেছে 'মণিহারী' অধ্যায়টিতে। মণিহারী তাঁর জন্মস্থান যে গ্রাম তার নাম। এরপর ধীরে ধীরে এসেছে তাঁর ডাক্তারী পড়ার গল্প, ছাত্র জীবনের সংগ্রাম, ছাড়াছাড়া ভাবে লেখালেখি করে টানাটানির সংসার চালানোর গল্প, অনেক বছর পর বনফুল হয়ে ওঠা এইসব। তাঁর জীবনের এই গল্প গুলো বুঝিয়ে দেয় লেখালেখি করাটা আসলে একটা সাধনা। যত না লেখা তার চেয়ে অনেক বেশী পড়া। অনেক বেশী সংগ্রাম। বনফুল কয়েকবারই বলেছেন এই বইয়ে, তাঁকে কেবল পাওনাদারের ধার শোধ করবার জন্যই প্রচুর লিখতে হয়েছে। এই ঋণ না থাকলে হয়তো এতো লেখা কখনোই হতনা। বনফুল ডাক্তার হিসেবেও অত্যন্ত কর্তব্যনিষ্ঠ ছিলেন। অনেক দরিদ্র রোগীকে তিনি বিনে পয়সায় চিকিৎসা দিয়েছেন বছরের পর বছর। ডাক্তার-লেখক এই দুই পরিচয়ের সীমারেখায় থেকে বনফুলকে রীতিমত হিমসিম খেতে হয়েছে প্রায়ই। ১৯৩৪ সালে মুঙ্গেরের ভয়াবহ ভূমিকম্পে সর্বস্ব হারিয়েছেন। আবার গড়েছেন সব একটু একটু করে। বনফুল ভক্ত/অভক্ত উভয়ের জন্যই দারুণ অনুপ্রেরণা হতে পারে জীবন সংগ্রামের এই আখ্যানগুলো।

বনফুল তাঁর গল্পের ব্যঙ্গের উপাদানগুলো পেয়েছেন তাঁর নিজের জীবন থেকেই। বাঙালি বাঙালিকে দেখতে পারেনা, এটা পুরনো কথা। বনফুল এই কথাই আবার শুনিয়েছেন। ডাক্তারী কাজের সূত্রে তিনি বিহারী অধ্যুষিত এলাকা ভাগলপুরে থাকতেন, বাঙালির শহর কলকাতা থেকে অনেকটা দূরে। সেখানে যখন তাঁর বাড়ী হল, গাড়ী হল, বাঙালি বন্ধুরা ঈর্ষাপরায়ণ হলেন সবচেয়ে বেশী। তারা তাঁর কাছ থেকে দূরে সরে গেলেন সবার আগে। অথচ ভিন্ন সংস্কৃতির, ভিন্ন ভাষার বিহারীরা তাঁকে আপন করে নিয়েছিলো। বনফুল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেছেন, "ভাগলপুরের অবাঙ্গালিদের স্মৃতিই আমার মনে রঙিন এবং মধুর হইয়া আছে। প্রেমের চাবি দিয়া সব তালাই খোলা সম্ভব। বাঙ্গালিদের উন্নাসিকতা এবং ভুয়া উচ্চমন্যতা বাঙ্গালিদের বৃহত্তর বিহারী-সমাজ হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া রাখিয়াছে" বাঙালিদের বিষয়ে এই মন্তব্য মর্মান্তিক কিন্তু অনস্বীকার্য। বাঙালির চাটুকার স্বভাব এবং বাঙালি পরিচয়ে লজ্জা নিয়ে বলেছেন "ইংরেজ আমলে বাঙ্গালী অনেক চাকরী পাইতো, বস্তুতঃ ইংরেজের খোশামোদ করিয়া সে-ই শাসনকার্য চালাইত। এখন চাকা ঘুরিয়া গিয়াছে, এখন সে বড় দরিদ্র। সে দারিদ্র্যের প্রভাব তাহার মহত্ত্বকে নীচুতায় পরিণত করিয়াছে। বাঙ্গালী আজ অন্তঃসারশুন্য বাহাড়ম্বর বজায় রাখিতে গিয়া মিথ্যাচারী হইয়া পড়িয়াছে। অন্তর্দ্বন্দ্ব, পরশ্রীকাতরতা, ঔদ্ধত্য, আত্ন-বিজ্ঞাপন, মিথ্যাভাষণ আজ তাহাদের মধ্যে প্রকট। পুরাতন মহত্ত্ব, মনীষা লোপ পাইতেছে। নতুন মহত্ত্ব ও মনীষা জন্মগ্রহন করিতেছেনা। এই চোঙ প্যান্ট, হাফশার্ট পরা ট্যাঁস সমাজে বিদ্যাসাগর, বিবেকানন্দ বা রবীন্দ্রনাথ জন্মগ্রহণ করিতে পারেনা।" মনে কতটা কষ্ট থাকলে এই কথা গুলো কলম দিয়ে বেরোয়, অভিজ্ঞতা কতটা তিক্ত হলে একই ভাষার ভ্রাতৃপ্রতিম মানুষগুলোকে চোখা কথার বল্লম দিয়ে খোঁচাতে হয়, তা নির্ণয় করবার অতীত।

বনফুলদের সেই সময়টা বাংলা সাহিত্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, পরশুরাম, বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ বাংলা সাহিত্যের অন্যতম স্তম্ভেরা সব এই সময়েরই মানুষ, এবং তাঁরা একে অপরের খুবই কাছের বন্ধু ছিলেন। তারাশঙ্কর বনফুলের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। প্রিয় লেখক তারাশঙ্কর এর চমৎকার কিছু গল্প বনফুল এখানে বিবৃত করেছেন যা বলে দেয় তারাশঙ্কর তাঁর সাহিত্যের সমান ভয়ানক উঁচু মনের মানুষও ছিলেন। বনফুলের বাসায় সাহিত্য সভায় এই মানুষগুলো সব এক হতেন। ভাবতেই অবাক লাগে, এতগুলো গুণী ব্যক্তিত্ব একসাথে, এঁরা কেউ কারো চেয়ে কম যান না। অথচ একে অপরের কী সুহৃদ! বর্তমানের ২০১৩ সালের যে সমাজ আমি চিনি, যেখানে এক ডাক্তার আরেক ডাক্তারকে গরুর ডাক্তার ঠাউরান, এক বুদ্ধিজীবী আরেক বুদ্ধিজীবীকে পুরীষ মস্তিষ্ক প্রমান করে বাহবা কুড়াতে চান, এক ফুঁয়ে কোটি মানুষের বিশ্বাসকে উড়িয়ে দিয়ে সমগ্র মানবজাতির 'উত্তরণের' দ্বার খুলে দিতে চান সে সমাজে বনফুলের সেই সাহিত্য সভার গল্প খুব বেমানান, অদ্ভুত আর অবিশ্বাস্য মনে হয়। বনফুলের এই জীবনচরিত বড় হীনমন্যতা দিয়ে গেলো, বাঙালি আমাকে।
… (meer)
 
Gemarkeerd
Shaker07 | May 18, 2017 |
এত সামান্য বিষয় নিয়ে এত অসামান্য করে লেখে কীভাবে!
 
Gemarkeerd
PsYcHe_Sufi | Jul 12, 2015 |

Statistieken

Werken
3
Leden
3
Populariteit
#1,791,150
Waardering
½ 4.7
Besprekingen
2